শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫১ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:
বরিশাল নগরীর ১৯, ২০ এবং ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর সালমা আক্তার শিলার বিরুদ্ধে ভুক্তোভোগী গ্রাহকরা ফুঁসে উঠেছে। বিকাশ মাল্টিপারপাস-কো-অপারেটিভ সোসাইটির পরিচালক হয়ে কয়েকশ গ্রাহকের টাকা আত্মসাত করার পর ‘জনপ্রতিনিধি’ পরিচয়ে গ্রহকদের সেই টাকা ফেরত দেননি আর। প্রায় পাঁচ বছর আগে বন্ধ করে বিকাশ মাল্টিপারপাসের অধ্যায় চুকিয়ে দিয়েছেন প্রতারণার মাধ্যমে-এমনটাই অভিযোগ পাওনাদারদের। পাওনাদাররা জানিয়েছেন, টাকা চাইতে গেলে হুমকি-ধমকিতো পেতেই হয়। পাশাপাশি হয়রানি মূলক মামলা ঠুকে দেন তাদের বিরুদ্ধে। এর আগে গ্রহকরা বিএম কলেজের সামনে মানববন্ধন করে টাকা ফেরৎ চাইলে অভিযুক্ত সালমা আক্তার শিলা সিটি নির্বাচনের আগে সমস্ত পাওনা পরিশোধ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নির্বাচন প্রায় শেষ হওযার পথে। শিলার দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন টাকা পাননি গ্রাহকরা।
শিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, বিএম কলেজ সংলগ্ন তার নিজ কার্যালয়ে (সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর) সালমা আক্তার শিলা তার স্বামী, দেবর, আপন ভাই, সর্বপরি পরিবারকে নিয়ে বিকাশ মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ (রেজিষ্ট্রেশন নং ০১৩ বিডি) নামে সমিতি গঠন করেছিলেন। এলাকার মানুষদের সেখানে তিনি টাকা জমা রাখার আহ্বান, অনুরোধ জানান। সাধারণ মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠানটি আরো আস্থায় নিতে শিলা কৌশল করে তার নিজ কার্যালয় ভবনেই ঐ সমিতির অফিস কক্ষ করেছিলেন। যেহেতু একজন জনপ্রতিনিধির নিজ অফিস এবং জনপ্রতিনিধি নিজে সম্পৃক্ত রয়েছেন এমন ভরসায় সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে শিলার জিম্মায় বিকাশ মাল্টিপারপাসে টাকা জমা রাখে। কিন্তু বিধি বাম।
সাধারন মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে শিলা প্রতারণার আশ্রয় নেন। সাইনবোর্ড খুলে লাপাত্তা হয় বিকাশ মাল্টিপারপাস। অর্থ নিঃস্ব হয় বিকাশের শত শত গ্রাহকরা। অর্থ কষ্টে কান্নায় ভেঙে পরে হাজারো মানুষ। গ্রহকদের সেই কান্না আজও থামেনি। এ নিয়ে বহুবার স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকাসহ টিভি মিডিয়ায় গ্রাহকদের আর্তনাদ প্রকাশ পায়। শিলা আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় ধরাকে শরাজ্ঞান বলেই মনে করে ভুক্তোভোগীরা। নতুবা শহরের মধ্যে থেকে প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে সাধারণ মানুষের অর্থ লোপাট করতে পারতো না বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। যদিও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, কারো ব্যক্তি অপকর্ম দল বহন করবে না।
অপরাধে জড়ালে দলে ঠাঁই থাকে না। বিকাশের ভুক্তোভোগী একজন গ্রাহক সকাল সন্ধ্যা সুইটিস এর মালিক বিশ্বজিত ঘোষ বিশু অভিযোগ করেন, প্রতিদিন ৪টি বইিতে ৪০০ টাকা করে জমা দিতাম। ৫ বছরে সাড়ে চার লাখ টাকা জমেছিল। সেই টাকা আমাকে ফেরত দেয়নি। টাকা চাইতে গেলে শিলার স্বামী ভিপি আনোয়ার আমার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক একটি চাঁদাবাজী মামলা দায়ের করে। যদিও আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। বিশু’র দাবী তার কষ্টের টাকা তিনি স্বসম্মানে ফেরৎ চান। হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা লন্ড্রী দোকানী হারুন খন্দকার হারুন অর রশিদ বলেন, মাথার ঘাম পায়ে ঝড়িয়ে প্রতিদিন টাকা জমা দিতাম। গর চলে না; তবুও দৈনিক ১০ টাকা করে জমা দিতাম। শিলা’র সমিতিতে আমার ৭১ হাজার টাকা জমছিল। কিন্তু সেই টাকা ফেরত দেয় নাই। টাকা চাইতে গেলে হমুকি দেয়। শিলার স্বামী আনোয়ার বলে, বাইর হইয়া যাও।
কোন টাকা পাইবা না। কথা হয় হাসপাতাল রোডের দোকানী মো: মনির হোসেনের সাথে। তিনি দৈনিক ১০০ টাকা করে জমা দিতেন। বিকাশ মাল্টিপারপাসের হিসেব মতে ৬০ হাজার টাকা হয়েছিল। এখন মনির শুধু সমিতির বই খুলে খুলে টাকার অঙ্ক দেখেন। কিন্তু কষ্টের টাকা আর ফেরত পাননি। বিপ্লব মিত্র নামে কালি বাড়ি রোডের বাসিন্দা আরেক গ্রাহক বলেন, দৈনিক ৩০ টাকা করে জমা দিয়ে ৭০ হাজার টাকা জমাই। পরে শিলা কমিশনার বলে, আমরা নাকি কোন টাকাই জমা দেই নাই। তিনি আমাদের পেটে লাথি মেরে দিনদুপুরে ডাকাতি করেছেন। শুধু বিপ্লব, মনির, হারুন, বিশু ঘোষ নন; এভাবে প্রায় সাড়ে ছয় শ’ গ্রহকের টাকা আত্মসাত করেছেন বিকাশ মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি। হাসপাতাল রোডের ক্ষুদ্র পানের দোকানদার নিতাই চন্দ্র কর অভিযোগ করেন, একজন সংরক্ষিত কাউন্সিলর যেহেতু নিজের পরিবার দিয়ে মাল্টিপারপাস চালাচ্ছেন নিশ্চই টাকা মার যাবে না। এই ভেবেই টাকা জমা রেখেছিলাম বিশ্বাস করে। কিন্তু বিকাশ মাল্টিপারপাস এখন লাপাত্তা।
প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা শিলার স্বামী আনোয়ার হোসেনের কাছে টাকা চাইলে দিয়ে দিব, দিচ্ছি এসব বলেন। কিন্তু টাকা পাই না। বিকাশ মাল্টিপারপাসের গ্রাহক রণজিৎ শীল, কিশোর দাস, স্বপন কর, দিলীপ, নাছিম, মীম আক্তার, জহিরুল ইসলাম বাদশা অভিযোগ করেন, আমরা প্রান্তিক মানুষ। দিন আনি দিন খাই। আমাদের টাকা আত্মসাত করেছে। সমবায় অফিসে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোন ফলাফল হয়নি। লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেও কাউন্সিলর হয়ে সব ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। বহু গ্রাহক এখনো টাকা পাবে ঐ বিকাশ মাল্টিপারপাসে। এ নিয়ে ভুক্তোভোগীরা প্রতিষ্ঠানের মূল কর্ণধার শিলার স্বামী আনোয়ার হোসেন ওরেফে ভিপি আনোয়ারের কাছে ধর্ণা দিলেও ফলাফল শূণ্য। উপজেলা সমবায় অফিসার মো: কামরুল আহসান বলেন, গ্রহকদের স্বার্থে কাজ করতে না পারার দায়ে আমরা বিকাশ মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটির কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছি।
বিকাশ মাল্টিপারপাস-কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিরুদ্ধে সমবায় অফিস বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গ্রহকদের টাকা পাওনার বিষয়টি আমাদের জানা আছে। অপর এক প্রশ্নে জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে রয়েছে। এ বিষয়ে সালমা আক্তার শিলা বলেন, সমবায়ের সিস্টেম হচ্ছে প্রতি পাঁচ বছর একজনকে সভাপতি করে সমিতিটি পরিচালনা করা। যখন আনোযার হোসেন ছিলেন তখন কোন সমস্যা হয়নি। আমাদের কাছে সমবায় অফিসের নীরীক্ষা প্রতিবেদন রয়েছে। কিন্তু আনোয়ার হোসেন চলে যাওয়ার পরে নতুন করে কাউকে সভাপতি করে দেয়নি সমবায় অফিস। ফলে ফিল্ড অফিসাররা গ্রহকদের টাকা উত্তোলন করে টাকা আত্মসাত করে নিয়ে গেছে। শিলা’র দাবী, কোন গ্রহকই দেখাতে পারবে না তিনি বা তার স্বামী আনোয়ার হোসেন কারও কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।
মূলত, তার এখন নির্বাচন চলছে। প্রতিপক্ষরা হেনস্থা করার জন্য এই অবিযোগ করছে। সালমা আক্তার শিলার দাবী তাদের কাছে কোন গ্রহকই টাকা পাবেন না। শিলার স্বামী আনোয়ার হোসেন জানান, বিকাশ মাল্টিপারপাসের চ্যাপ্টার শেষ হয়ে গেছে ১০ বছর আগে। তার কাছে প্রমাণ রয়েছে, অডিট রিপোর্ট রয়েছে। কেউ কোন টাকা পাবে না তাদের কাছে।
Leave a Reply